স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম এখন কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত আড়াই মাসে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমেছে ৬৩ শতাংশের বেশি। বাজারে এখন প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট—জ্বালানি পণ্য পরিমাপের একক) এলএনজির দাম নেমে এসেছে ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে। আগামী মাস নাগাদ পণ্যটির দাম আরো কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের পর্যবেক্ষকরা।
বাজারে এলএনজির দাম এখন অব্যাহতভাবে কমতে থাকলেও এখনই স্পট মার্কেট থেকে পণ্যটি ক্রয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই পেট্রোবাংলার। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম এখন কমতির দিকে থাকলেও তা কেনার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ পেট্রোবাংলার কাছে নেই। অর্থ বিভাগের কাছ থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে আনা এলএনজির মূল্য পরিশোধেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি কোনো অর্থ সংস্থাটির হাতে থাকছে না। আবার স্পট থেকে এলএনজি কিনতে যে পরিমাণ ডলার প্রয়োজন তাও এখন জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এখনই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়া যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল গত মে মাসে। সে সময় প্রতি এমএমবিটিইউ কিনতে ব্যয় হয়েছিল ২৬ ডলার ৪ সেন্ট। ওই সময় এ দরে সিঙ্গাপুরের ভিটল এনার্জির কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি কিনতে পেট্রোবাংলার ব্যয় হয়েছিল ৯০৯ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরপর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ কমে আসে ১৫০-২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সর্বোচ্চে। ওইদিন জাপান-কোরিয়া মার্কার (জেকেএমসি ১) বাজার আদর্শে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৬৯ ডলার ৯৬ সেন্টে উঠে যায়। গতকাল তা নেমে এসেছে ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে। সে হিসেবে গত আড়াই মাসে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমেছে ৬৩ শতাংশের কিছু বেশি। আগামী মাস নাগাদ তা আরো কমে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। যদিও অর্থ ও ডলার সংকটের কারণে এখনই এলএনজির বাজার নিম্নমুখিতার সুবিধা নিতে পারছে না পেট্রোবাংলা।
বর্তমানে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম গত মে মাসের পর্যায়ের চেয়েও নিচে নেমে এসেছে। এর পরও স্পট থেকে এখনই পণ্যটি কেনার কোনো পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ক্রমবর্ধমানভাবে কমে যাচ্ছে, এটি একটি ভালো খবর। আমরাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আগামী ডিসেম্বরও আমরা পর্যবেক্ষণ করব। সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে এলে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। এরপর সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।
জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারকদের সাম্প্রতিক বেশকিছু বক্তব্যেও উঠে এসেছে, স্পট মার্কেট থেকে এখনই এলএনজি আমদানি শুরুর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। সম্প্রতি এলএনজি সরবরাহ কমায় গ্যাস সংকটের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের নজরে আনার প্রয়াস নেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাস কিনতে চাইলেও এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি নীতিনির্ধারকরা। বরং স্থানীয় উৎস থেকে সংকট সামাল দেয়ার কথা বলা হয়েছে বারবার।
শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চেয়ে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনার আয়োজন করেন ব্যবসায়ীরা। ওই সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রমের কাছে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর দাবি তোলেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এজন্য তারা প্রয়োজনে এলএনজি আমদানিতে বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত বলে ওই সেমিনারে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ডলার ও রিজার্ভের বিদ্যমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আমদানি ছাড়াই স্থানীয় উৎস থেকে সরবরাহের সংস্থান করা হবে বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা।
স্পটের মতো ফিউচার মার্কেটেও এখন এলএনজির দাম কমতির দিকে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম এখন নেমে এসেছে ২৬ ডলারে। এক সপ্তাহের এ চুক্তির আওতায় এলএনজির দাম কমেছে প্রতি এমএমবিটিইউতে ২ ডলার বা ৭ শতাংশ। এছাড়া ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতেই ইউরোপমুখী কার্গোয় পরিবাহিত এলএনজিতে এমএমবিটিইউপ্রতি ১১ ডলার কমিশন দিয়ে বেচাকেনা হচ্ছে ২১ ডলারে।